Read more;" /> হতদরিদ্র ঘরের এক বোনের জীবনে ঘটে যাওয়া ইসলামিক শিক্ষামূলক কাহিনী - sangram barta
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

হতদরিদ্র ঘরের এক বোনের জীবনে ঘটে যাওয়া ইসলামিক শিক্ষামূলক কাহিনী

Reporter Name / ৫২৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২

হতদরিদ্র ঘরের মেয়ে হাফসা। বাবা ছিলেন কৃষক।অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করেই জীবিকা চালাত। ৩ ভাই বোনের ভিতরে হাফসা বড়। ছোট ভাইয়ের বয়স ১০ আর বোনের বয়স ৮ বছর।অভাব অনটনের মাঝেও ভালই চলছিল হাফসাদের সংসার। হঠাৎ ৩ দিনের জ্বরে বাবা মারা যায়। অকুল সাগরে পরে যায় হাফসার মা। ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসারের চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। হাফসা মাদ্রাসায় পড়তো। ভাগ্য এবার ও ওদের অনুকূলে ছিলনা। হাফসার আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়লো। অন্যের বাড়ি কাজ করার মতো অবস্থা রইলো না।হাফসার আর পড়া হলোনা বাড়ি এসে মা ভাই বোনের দ্বায়িত্ব নিতে হলো।
অনেক কষ্টে একটি শেলাই মেশিন জোগার করে গ্রামের মেয়েদের কাপড় শেলাই করতো আর পাশা পাশি গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কোরান শিক্ষা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতে থাকে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে সব সময় বিপদে পড়তে হয়।
হাফসা খাস পর্দা করেই ঘর থেকে বেড় হতেন কোরান শিক্ষার জন্য কিন্তু শয়তানের নজর এড়াতে পারেনা। গ্রামের মাতবরের বখাটে ছেলের নজরে পড়ে যায়। প্রতিদিন রাস্তায় হাফসাকে বিরক্ত করে কিন্তু হাফসা ভয়ে কিছুই বলেনা। চুপচাপ মাথা নিচু করে ফিরে আসে। কিন্তু উৎপাত দিন দিন বারতেই থাকে।
হাফসা ছিল খুবই বুদ্ধি মতি মেয়ে। ও জানতো ধনির বখাটে ছেলের সাথে লড়াই করে পারবে না তাই সে বুদ্ধি করলো কি করে এই বিপদ থেকে বাচা যায়। তাছাড়া হাফসা চায় তার জীবনে এমন কেউ আসুক যে নামাজী, দ্বীনদার হবে।যে তার পাশে থেকে তার পরিবারের জন্য ভরসার জায়গা হবে। যদি এই ছেলেই তার ভাগ্যে থাকে তাহলে তাকে নামাজী কি করে বানানো যায়।তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো কৌশলে কিছু একটা করতে হবে।
পরের দিন হাফসার পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে সোহেল। হাফসা আজই প্রথম মুখ তুলে সোহেল কে বললো,
আপনি যে আমাকে ভাল বাসেন তা আমি বিশ্বাস করিনা। আপনি বড়লোকের ছেলে, অনেক কিছু আছে আপনার, আমার মত গরিব মেয়েকে কেন ভালবাসবেন?
সোহেল বললো তুমি বললে আজই আমার বাবা মাকে তোমার মায়ের কাছে পাঠাবো বিয়ের জন্য।
হাফসা বলে বিয়ে করলেই তো প্রমাণ হয়না আমাকে ভালবাসেন। বিয়ের পর হয়তো আর এমন আগ্রহ থাকবেনা।আপনাদের মতো ধনিদের কাছে বিয়ে তো পুতুল খেলার মতো ইচ্ছে হলে করবেন আবার ইচ্ছে হলে ছুড়ে ফেলে দিবেন।
তখন সোহেল বলে কী প্রমাণ চাও বলো! তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।কী চাও তুমি?তুমি যা চাইবে তাই দিব!
হাফসা বলে সত্যি যদি আপনি আমাকে ভালবাসেন তাহলে আমার জন্য ছোট্ট ২ টা কাজ করতে হবে। যদি করতে পারেন তাহলেই বুজবো আপনি আমাকে সত্যিকারের ভালবাসেন। আমি কথা দিলাম আপনি যা বলবেন আমি তাই মেনে নিবো।
সোহেল বললো আমি রাজি। বলো কী করতে হবে।
হাফসা বললো ;
(১)আপনি মাত্র ৪০ দিন পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের সহিত নামাজ পরবেন। আর,
(২)আমার স্বপ্ন আমার স্বামীর মুখে দাড়ি থাকবে।
তাই যদি আমাকে বিয়ে করতে চান আজ থেকে আর দাড়ি কাটবেন না।
এই দুইটা কাজ করতে পারলেই ঠিক আজ থেকে ৪১ দিনের দিন আমি আপনার হয়ে যাবো।
সোহেল বলে, এই আর কঠিন কী। কিন্তু ফজরের সময় তো আমি উঠতে পারিনা। হাফসা বললো আমি প্রতি ওয়াক্তে আপনাকে ফোন করে মনে করিয়ে দিব নামাজের কথা এবং সকালেও আমি ফোন করে তুলে দিব। সোহেল রাজি হলো এই শর্ত্যে।
প্রথম দিনেই ভোরে উঠতে গিয়ে বুজলো সকালে উঠে নামাজ পড়া এতো সহজ কাজ না। সারা রাত আডডা দিয়ে আকাম কুকাম করে মাত্র ঘুমিয়েছে এর মধ্যেই হাফসার ফোন। কী আর করার অনেক কষ্টে নামাজ পরলেন। প্রথম কয়দিন ভীষন কষ্ট হতে লাগলো। দাড়িগুলো ও জংগলের মতো লাগে। মনে মনে ভাবে মাত্রতো কয়টা দিন, এর পর আমার সব আগের মতো হয়ে যাবে। সামান্য একটা মেয়ের কাছে হেরে যেতে হবে। এটা কী করে সম্ভব। ভালবাসার চেয়ে এখন ইগোতেই বেশি লাগে।
একদিন দুইদিন করতে করতে ১৫ দিন হয়ে গেছে এখন আর আগের মত খারাপ লাগেনা কেমন যেন একটা ভাল লাগা কাজ করে। প্রতিদিন নিয়ম মত হাফসা ফোন করে শুধু নামাজের সময় হয়েছে এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা। বন্ধুদের সাথে এখন আর আগের মতো আড্ডাটা জমেনা। আড্ডা শুরুকরার সময় নামাজের সময় হয়ে যায়।তাছাড়া কোন খারাপ কিছু করতে গেলেই মনে হয় মাত্র নামাজ পরে এসেই এটা করবো? কেমন যেন বিবেকে আগের মতো সারা দেয়না। তাই বন্ধুরা কেমন যেন দূরে চলে যাচ্ছে আগের মতো ভাল লাগেনা।
হাফসা তাহাজ্জত পড়ে আল্লাহ দরবারে দোয়া করতে থাকে একটি ভাল সমাধানের জন্য। মাস শেষ হয়ে এলো সোহেল তার কথা মতো নামাজ পরে দাড়ি রেখেছে। আগের মতো রাস্তায় আড্ডা দেয়না এ ভেবে হাফসা মনে মনে খুশি হয়। আল্লাহ শোকর আদায় করে।
সোহেলের বাবা মা ও খেয়াল করেছে তাদের আদরের সন্তান হঠাৎ করে কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। যাকে কোনদিন বকেও নামাজে পাঠাতে পারেনি সে নিজেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে। বন্ধুদের আড্ডায় যায় না। আগে প্রতিদিন যার নামে বিচার আসতো এখন কোন বিচার আসেনা। কি হলো ছেলেটার কিছুই বুজতে পারেনা।
দেখতে দেখতে ৪০ দিন পার হয়ে গেলো। আজ আর হাফসা ভোরে ফোন দেয়নি। সোহেলের এখন ফোনে ডেকে দেয়ার অপেক্ষা করতে হয়না কিন্তু হাফসার কন্ঠ শুনতে পাবে তার অপেক্ষা করে থাকে। আজ হাফসা ফোন দেয়নি তবুও ফজরের নামাজ পড়ে আসলো। ভেবেছিল দাড়িগুলো কেটে ফেলবে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দাড়িতেই ওকে বেশি সুন্দর লাগছে। আগে কতো বাজে সময় নষ্ট করেছে তার জন্য খুব অনুতপ্ত হচ্ছে। কিভাবে হাফসার সামনে যাবে সেই কথা ভাবছে। আজ খুব সংকোচ হচ্ছে। নিজেই ভাবতে লাগলো হাফসার মতো মেয়ের যোগ্য আমি না।
হাফসা ও খুব চিন্তায় পরে গেলো সোহেল কে কি বলবে। কি হবে এখন? তাই বার বার আল্লাহ কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে। সোহেলের বাবা মা খোজ নিয়ে জানতে পারে হাফসার জন্যই সোহেলের এই পরিবর্তন। তাই উনারা হাফসাকে বউ করে নেয়ার জন্য হাফসার মায়ের কাছে আসে। এবং হাফসাদের পরিবারের সব দ্বায়িত্ব তারা বহন করে।
সত্যিকার অর্থেই একটা মেয়ে ইচ্ছে করলে অনেক ভাল কিছু করতে পারে। তারই উদাহরণ হলো হাফসা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর